যাচ্ছিলাম ইচ্ছামতো আনমনে হেঁটে
পাথর ছড়ানো দীঘল রেললাইন ধ’রে ধ’রে
ক্লান্ত পায়ে। মনে মনে ক’রে নিচ্ছিলাম
একরাশ গৃহপালিত স্বপ্নের তল্পি-বওয়া তদারক আর
দৈনিক ক্রিয়াকর্মের খুচখাচ হিসাব-নিকাশ
ঠিক দিনের বাণিজ্য শেষে ঘর-ফিরতি ফেরিঅলার মতো
অবসন্ন,আত্মমগ্ন, ক্রমশঃই বেজায় ব্যাজার
বিরক্তিতে ভরপুর সমস্যা-সঙ্কুল জীবনের ঘানি
টেনে টেনে ।
হঠাৎ চোখে পড়লো —
কুচি পাথরের কোলে ঝাঁপড়া ঘাস-ফুলের উপর একটা
হলুদ রঙের প্রজাপতি । স্বতঃস্ফূর্ত
ডানা দুটো নেড়ে নেড়ে অদ্ভুত ভঙ্গীতে
ইতস্ততঃ উড়ছে বসছে বারবার,নীল
জলের উপর পাল-তোলা ময়ূরপঙ্ক্ষী নৌকার মতো
অনায়াসে ঢেউ ভাঙে যেন দাঁড়-বাওয়া ছিপছিপে ঢেউয়ে ।
চৌদিকের ঝোপঝাড় ঘাসের সবুজ তার সেই
উদ্দীপক বর্ণাঢ্য আভায় উদ্ভাসিত
উদীয়মান সূর্যের সৌম্যকান্তি দিগন্তের মতো অপরূপ ।
মুহূর্ত্তেই আবিষ্ট দু’চোখ
সৃষ্টির বিস্ময় দ্যাখে নিসর্গের নিরুদ্দিষ্ট শিল্পের নিভৃত
ক্ষুদ্রতম অভিব্যক্তি থেকে । অকস্মাৎ
ইচ্ছে হয় , কেউ দেখুক বা নাই-বা দেখুক,
জীবিকার যাঁতাকলে বিচূর্ণ হয়েও
সমস্ত উপেক্ষা দুঃখ ব্যর্থতা সয়েও
কবিতার ডানা মেলে আমি ওই হলুদ রঙের
প্রজাপতির মতোই মোহন ভুবনচারী হ’য়ে যেতে চাই ।।