Alekh

বহুদিন পর কী একটা কাজে হঠাৎ 
একদিন আমাদের সেই পুরাতন
 হাইস্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম একা, 
ওখানে মেট্রিক পাশ করেছি সুনামে, 
দামে কিন্তু হেরে গেছি ট্যাঁকের মাশুলে
 তবু ভুলে স্কুলকেই অলক্ষ্যে সালাম দিলাম।
 
অন্তত বিশ বছর পর
ডিগ্রীর সার্টিফিকেট তুলতে কলেজে গেলাম,
 ফটকে দাঁড়িয়ে সেদিনের
সেই পাজামা-পাঞ্জাবী পরা অন্তরাল তরুণকে ডেকে 
মেলালাম ল্যাবরেটরীর বারান্দায়, 
দ্বিধায় দ্বিধায় শুধালাম স্যারদের কথা
 অনেকেই চ’লে গেছেন বদলি হয়ে, হাজরা বাবুর
সাথে দেখা হল বাইরের মাঠে, বটানি টীচার, 
পরিচয়ে চিনলেন, চোখ মুখে বিস্মিত আনন্দ 
উপচে’ এলাে উভয়ের ,চার-পাঁচটা পড়ুয়া নিয়ে তাঁর 
সেদিনের ক্লাশ দরদে ভাস্বর, এর বেশী আর কি চায়? 
স্মৃতি-ভারাতুর মনে ফেরার সময়
অলক্ষ্যে কলেজকেই সালাম দিলাম।
 
কালেভদ্রে গাঁর বাড়ি যাই।
ঘুরতে ঘুরতে কখনো সন্ধ্যায় 
একদা যেখানে আমাদের প্রাইমারী স্কুল ছিল 
( আজ নাই) সেই বয়ােবৃদ্ধ পাকুড় তলায় গিয়ে 
দু’দণ্ড দাঁড়াই আনমনে, সহপাঠীদের মুখ 
আবছা আবছা মনে ভাসে, কে কোথায় জানা নাই, 
যেমন সেই স্কুলের ভিটেমাটি সব বেদখল আজ, 
সাক্ষী শুধু, বুড়াে পাকুড় গাছটা বিষন্ন একাকী।
পাখি-খাওয়া লাল লাল পাকুড় বীচির কথা 
মনে পড়ে, পকেটে পুরেছি কতো কুড়িয়ে কুড়িয়ে।
আজকাল জায়গাটা চেনা বড়ো দায়। 
তবু সেই অদশ্য স্কুলকেই অলক্ষ্যে সালাম জানাই।
 
                        (২)
 
অন্তরে  মাঠের বীজ ধানের প্রত্যয়
 শহরে  বসত করি, গ্রামে মন রয় 
বিষয়-আশয় নয়, বিবর্ণ অতীত 
অস্তিত্বের অন্তরালে সদা গড়ে ভিৎ, 
ভিড় করে  ছােট ছােট সুখ দুখ স্মৃতি 
হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রাণের প্রতীতি।
 
তার মাঝে মান্যবর শিক্ষাগুরুগণ 
যাদের ঋণের দায় বই আজীবন 
অন্তরে, আদর্শ-সম বহ্নিমান জ্যোতিঃ 
 পাঠভবনের মাটি ছায়া সরস্বতী
 অন্তরালে একীভূত অমৃত অনল 
আনন্দের স্বর্গরাজ্যে দ্যায় পরিমল।
 
সেই বােধ সেই ব্যথা বুক জুড়ে থাকে, 
কখনো আলোয় হাসে, কভু মেঘে ঢাকে
 কভু ডাকে আন্তরিক উষ্ণ অভিধায় 
যেমন ফেরাতে চায় বিষণ্ণ বিদায় 
পিছু পিছু  দরজায় এসে, অনন্তর 
বহুক্ষণ চেয়ে থাকে ফেলে-আসা পথের উপর। 
সেই বোধ অবােধ কলায় হাত তােলে, 
মাথা নত করে তার অতীত উপলে |

By Alekh

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *