আমার যেদিন জন্ম!
সেদিন সকালে চারিদিক সুমধুর আযানের আওয়াজে ভরে গিয়েছিল।
কিন্তু আমার কানে কেউ আযান দেয়নি।
কারন আমি মেয়ে!
এ সমাজ ব্যবস্থায় আমি অবাঞ্ছিত!
আমি জন্মেছিলাম খুব ছোট,
দেহে লাল রঙের লালিমা নিয়ে
সবাই বুঝে নিয়েছিল মেয়ে কালো।
একেতো মেয়ে! তার উপর কালো মেয়ে!
কেউই তেমন আর খুশি হতে পারেনি।
হ্যা, আমি কালো মেয়ে!
ছোটখাটো মুখ, মিষ্টি চেহারা
যে দেখে সেই বলে।
কিন্তু তাই বলে কেউ কখনো সুন্দরী সম্বোধন করেনি।
এই প্রাচ্যের দেশে আমরা জানি,
সুন্দর হলো দুধে আলতা রং, ছিপছিপে গায়ের গঠন,
ঠিকঠাক লম্বা, ঘন চুল, পটলচেরা চোখ, পান পাতার ঠোঁট আরও কতো কিছু!
এ সবের কোনটাই আমার নেই
তাই মিষ্টি মেয়ে হলেও সুন্দরী হয়ে ওঠা হয়নি।
আমি কালো
ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি।
আমার মা, কাকিমা,দাদিমা সবাই বলতো মেয়ে কালো!
সবারই এক চিন্তা
এ কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে?
এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণই বটে!
আমার বুদ্ধিমত্তা, লেখা-পড়া, আমার জানার পরিধি সবাইকে মুগ্ধ করলেও
কালো মেয়ের তকমাটা এ দেহ থেকে কখনোই মুছে যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে
বেশ ভালো চাকুরী করে
বাবা মা, ভাই বোন সবার মুখই উজ্জ্বল করেছি।
কিন্তু চিন্তার ছায়া মুছে দিতে পারিনি।
যাই হোক বিয়ে আমার হয়েছে। ভালোই হয়েছে।
বেশ ভালো বেতনে চাকুরী করি
সংসারে তাই কদরও বেশ ভালো।
তবুও শাশুড়ি, ননদ, এমনকি নিজের বরও তার সমাজ জীবনে
এই কালো বউকে পরিচয় করিয়ে দিতে কিছুটা কুন্ঠা বোধ করেন।
যদিও এ অভিজ্ঞতা নতুন কেননা মায়ের বাড়িতে অন্তত এ সমস্যা অনুভব করতে হয়নি।
কিন্তু জীবন ভারি অদ্ভুত সে তার চটুলতা দিয়ে গুরুত্বের গুরুত্বটা বুঝিয়ে দিয়ে যায় বারেবার।
কালো মেয়েরা এ সমাজে বসবাসরত নাগরিকের নানা চিত্র এবং চরিত্র
এবং তাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা খুব গভীরভাবে অবলোকন করে বেড়ে ওঠে।
তাই তারা অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারে।
তারা দেখে এবং হাসে!
কখনো নিজের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, কখনো অন্যের অবান্তর কৌতূহলে।
কিন্তু এখন আর এসব গায়ে মাখেনা, সয়ে গেছে সব।
এসবকে এখন আর ধর্তব্যের মধ্যে গণনা করাই ছেড়ে দিয়েছে।
পরিহাসকে পরিহাস ভেবেই উড়িয়ে দেয়।
কালো মেয়েদের কাব্যগুলো কিছুটা একই ছকে বাঁধা।
প্রাচ্যের এ সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েই যেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত
সেখানে একটি কালো মেয়ে কেনইবা অভিশপ্ত হবে না!
নিয়তির এ নির্মম পরিহাস কেনই বা তাকে কটাক্ষ করবে না!
এটাই তো স্বাভাবিক!
কিন্তু আমরা একবিংশ শতাব্দীর নাগরিক
এটাও হয়তো কিঞ্চিৎ মাথায় রাখা প্রয়োজন।
এই পাষবিক সমাজ ব্যবস্থা, এ বর্বর মানসিকতা,
রুচিহীন পঙ্কিল বাক্যবাণ বাক্সবন্দী হোক।
কালো মেয়ের কাব্যকথাই হয়ে উঠুক রূপকথা।
একবিংশ শতাব্দী হোক নারীর প্রতি পরিবর্তনশীল দৃষ্টভঙ্গির এক নতুন ধরা।
আজকের দিনে মেয়েরা যখন জ্ঞানে বিজ্ঞানে এগিয়ে , পৌঁছে যাচ্ছে মহাকাশে তখন মেয়েদের গায়ের রং নিয়ে মজা মস্করা , বাছাই করা , একেবারে মাথামোটাদের কাজ . ওদেরকে উপেক্ষা করে সব মেয়েরা এগিয়ে চলুক নিজের লক্ষে , নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে সম্মান দিয়ে