আদমের একাকী অসুখ
মহাজীবনের স্বপ্নে প্রতিদিন মহুয়া আমার—তবু সে ফুরিয়ে গেল! এ যেন বিশুদ্ধ ইচ্ছেশক্তির সমার্পণ। কতো ছুঁই অথচ সে গলে না। আজ আমাদের উৎসবের দিন—কিন্তু সে যেন জুড়িয়ে যাওয়া বরফের মেয়ে! আমার কেবল একাকী নির্জন অসুখ। যার লক্ষণরেখা বরাবর—নৈঃশব্দ্যের হামাগুড়ি। আমার ধুতরোফুলের মতো হাসিতে সে পাগল হয় না আর! তার চিত্ররূপময় হাসিতে খোলে না মুগ্ধতার জানালা। নক্ষত্রের নাকফুলে সে যেন গৃহবন্দী। আমিও হাঁটছি তার গভীর তলদেশে! তার খনিজ গমের সিন্দুকে চোখ রেখে বলেছি—স্বর্গীয় উচ্ছাসের কথা। তবু তার তীব্র ও নরম সাহস আমাকে করে তোলে জড়োসড়ো। আমি তার চোখে পরিয়ে দিয়েছি জীবন দেখার চশমা অথচ কিছুতেই যেন মেটে না তার শরীলি উদ্বেগ! সে যেন স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হাওয়া! তাই তার মুখে লেপ্টানো উদ্ভন্ত আদমের রেখা! আমার সহজ প্রেম— নৈরাশ্যময় তিক্ততায় ভরা। সে কি ফেলে এসেছে আয়নার ওপারে বাস্তবের মুখোশ? যে কারণে জীবনের শরীলে তার বড্ড অনীহা। কিন্তু আমি তার সু²তাপ্রিয় প্রতিভায় মুগ্ধ আদম। তার ভঙ্গুর হৃদয়ে পরাতে চাই অমরাবতীর অঙুরি। কারণ আমি সেই স্বর্গত্যাগী আদম যার একাকী অসুখে পুড়ে গেছে পৃথিবীর যাবতীয় শস্যের পেট! হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকা এ এক দারুণ হাশর।
আকাশ পাড়ের শুকতারা
ডুবন্ত সূর্যের আলো নিয়ে বসে আছি—মধুশালায়। সূর্য ডুবে গেলে আমিও ডুবে যাই। আলো ছাড়া চোখ বড় দুঃখের। লুপ্ত সৌরভের কাছে উদাস হয়ে ডুবে যাচ্ছি। যেন আমি সাগর বেলাকার ঝিনুক। গরম দুধের বাটির মতো আমার স্বপ্ন। মরা গাঙের আকাশ পাড়ের শুকতারা আমি! তুমি আকাশ প্রিয় সূর্য মহুয়া। কালো জামের বিচির মতো তোমার জমাটবাধা চোখ দিয়ে বের হচ্ছে—সুরের আগুন। অথচ আমরা উজান ভাঁটির খেলায় জমে উঠেছি এই পোড়ামুখো দেশে। মধুর ঠোঁটের মতো স্মৃতি ঝুলে পড়ছে আগুন ঝলসানো পদ্মফুলে। তোমার ছবির মতো মুখে কপাল জুড়ে রহস্যমেদুর আল্পনা। যেন তুমি আহ্লাদী মাটির পোড়ানো পুতুল। রূপোর ঝিনুক থেকে আলতা কুঁড়িয়ে মুছে দিচ্ছি—তোমার স্বর্গীয় পায়ে। রাখালিয়া রসিকতা আমার। যেন আমি শুধু তোমার ¯্রষ্টার মতো একক খেলুড়ে!
নকশাকাটা শরীল
বিদুষী কবিতার মতো তোমার প্রতি আমার একক পক্ষপাত! যদিও এই শুড়িখানার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে—সাতটি নরকের কালো ঢেউ। আর তাতে ভেসে যাচ্ছে চাকা ও জাদুকর! লাজুক কবিতার শিরোনামে—আমি ঢুকে পড়ছি তোমার শারীলিক সৌখিন শিসির ভেতর। তুমি আমাকে দৈত্য বানাতে চাও? কিন্তু পারো না! তোমার স্তনের পাথরে ঘষে দিচ্ছি ঠোঁটের কষ্টিপাথর! তুমি বলছো মধুশালায় আজ নামবে পাহাড়ী জ্যোৎ¯œা! যেন সুধা সমুদ্রে ডুবে বাতাসে পাতা ফাঁদে—বিষাক্ত মাকড়সার মতো আটকে পড়ি আমি! তোমার নকশাকাটা দেহে ঠোকরাচ্ছে আমার স্মৃতির আঙুল! এই সস্তা রাগে—তুমি যেন ফুটে আছো শাকুরার বাগে।
পলিয়ার ওয়াহিদ ২৬ ফাল্গুন ১৩৯২ শুক্রবার— যশোরের —ঐতিহ্যবাহী পাঁজিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফুলটাইম মিষ্টি কোম্পানিতে ম্যানেজারি আর পার্টটাইম মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও ঢাকা কলেজে স্নাতকত্তোর শেষে একটা জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরত।